প্রতিদিন শিক্ষা বোর্ডে অনেকে আসেন বিভিন্ন রকম সমস্যা নিয়ে। কেউ সনদ তুলতে, কেউ বা হারিয়ে যাওয়া অথবা নষ্ট হয়ে যাওয়া সনদ পুনরায় তুলতে। কেউ আসেন ভুল সংশোধন করতে। সেটি নামের ভুল হতে পারে, হতে পারে জন্মতারিখের ভুলও। চলুন জেনে নিই শিক্ষা বোর্ড থেকে আপনি আপনার সনদ কখন পাবেন? কোথায় পাবেন? খরচাপাতিই বা কেমন পড়বে ইত্যাদি। এসব তথ্য জানালেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের উপপরীক্ষা নিয়ন্ত্রক (সনদ) তপন কুমার সরকার।
একাডেমিক ট্রান্সক্রিপট
মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পরীক্ষায় পাস করলে আপনার সংশ্লিষ্ট শিক্ষা বোর্ড থেকে (যে বোর্ডের অধীনে পরীক্ষায় অংশ নিয়েছেন) একটি নম্বরপত্র পাবেন। এখন এটি একাডেমিক ট্রান্সক্রিপট নামে পরিচিত। এই সনদে শিক্ষার্থীর বিষয়ভিত্তিক পরীক্ষার নম্বর উল্লেখ থাকে। একাডেমিক ট্রান্সক্রিপট পরীক্ষার ফল প্রকাশের ১০ থেকে ১৫ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়ে থাকে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীদের তা তুলে নিতে হয়। এ জন্য শিক্ষার্থীকে কোনো ফি দিতে হয় না। তবে খরচ বাবদ পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় ৩৫ টাকা বোর্ড নিয়ে থাকে।
সাময়িক সনদ
ফল প্রকাশের পর মূল সনদ হাতে পেতে শিক্ষার্থীকে বেশ কিছুদিন অপেক্ষা করতে হবে। এর মধ্যে নানা প্রয়োজন হলে সাময়িক সনদ ব্যবহার করা যায়। সাময়িক সনদ তুলতে হলে বোর্ডের নির্ধারিত ফরমে আবেদন করতে হবে। আর ফি জমা দিতে হবে ১৩০ টাকা। এ জন্য প্রার্থীকে সরাসরি বোর্ডে যোগাযোগ করতে হবে। আবেদন জমা দেওয়ার তিন কর্মদিবসের মধ্যে সাময়িক সনদ পাওয়া যাবে। আবেদনপত্র বোর্ডের সনদ শাখায় পাওয়া যাবে অথবা বোর্ডের ওয়েবসাইটেও পাবেন।
মূল সনদ
তপন কুমার সরকার বলেন, মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক ফল প্রকাশের তিন মাস বা ৯০ দিনের মধ্যে শিক্ষার্থীদের মূল সনদ ইস্যু হয়ে যায়। এ সময়ের মধ্যে সনদপত্র তাঁদের নিজ নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। শিক্ষার্থীকে তাঁদের নিজের প্রতিষ্ঠান থেকে তুলে নিতে হবে। মূল সনদ নিতেও প্রতিষ্ঠানকে কোনো টাকা-পয়সা দিতে হবে না। ফি বাবদ ১০০ টাকা বোর্ড পরীক্ষার ফরম পূরণের সময় নিয়ে থাকে।
হারিয়ে গেলে বা নষ্ট হলে
হারিয়ে যাওয়া বা নষ্ট হয়ে যাওয়া সনদের নকল কপি তুলতে আপনাকে বোর্ডের বরাবর আবেদন করতে হবে। এ জন্য নির্ধারিত আবেদন ফরমও আছে। এর আগে থানায় সাধারণ ডায়েরি (জিডি) করতে হবে। পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দিতে হবে। ফি লাগবে ১৩০ টাকা। আবেদনের তিন দিনের মধ্যে সনদ বা নম্বরপত্রের নকল কপি পাবেন।
ইংরেজি করতে
যাঁরা ২০০০ সালের আগে মাধ্যমিক বা উচ্চমাধ্যমিক পাস করেছেন, তাঁদের নম্বরপত্র বা সনদ বাংলায় পাবেন। কিন্তু বিভিন্ন কাজে এখন আর বাংলায় তৈরি সনদ চলে না। বিশেষ করে যাঁরা দেশের বাইরে যেতে চান তাঁদের। এসব বিবেচনায় বোর্ড আপনার সনদ ইংরেজি করে দেবে। ফি লাগবে প্রতিটি সনদের জন্য ১৩০ টাকা। নির্ধারিত ফরমে আবেদনের তিন দিনের মধ্যে পেয়ে যাবেন ইংরেজি কপি।
সংশোধন
আপনার নম্বরপত্রে বা সনদে যদি কোনো ভুল থাকে তবে সংশোধন করে নিতে পারেন। ভুল সংশোধন করতে পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি দেওয়ার পাশাপাশি নোটারি করা হলফনামা সঙ্গে জমা দিতে হবে। ফি ৫০০ টাকা।
নাম সংশোধনের ক্ষেত্রে একটি কমিটি আবেদনটি বিবেচনা করে সিদ্ধান্ত নেবে। যেকোনো সময়ে পাস করা প্রার্থী যেকোনো সময় নামের সংশোধনের জন্য আবেদন করতে পারবেন। তপন কুমার সরকার জানান, জন্মতারিখ ঠিক করতে হলে পাস করার দুই বছরের মধ্যে আপনাকে আবেদন করতে হবে।
যেসব ক্ষেত্রে আপনাকে আবেদন করে সনদ বা নম্বরপত্র তুলতে হবে বা সংশোধন করতে হবে, তার জন্য নির্ধারিত আবেদন ফরম বোর্ড থেকে বিনা মূল্যে পাওয়া যাবে। অথবা সংশ্লিষ্ট বোর্ডের ওয়েবসাইটেও ফরমগুলো পাওয়া যাবে।
আপনি বোর্ডে যখন সরাসরি যোগাযোগ করতে যাবেন, ভুলেও কোনো দালালের খপ্পরে পড়বেন না। নিজে সরাসরি সব কাজ করবেন। দালালের খপ্পরে পড়লে আপনার টাকাও যেমন বেশি লাগবে, তেমনি হতে পারেন প্রতারিত। তা ছাড়া সময়মতো প্রয়োজনীয় কাগজটি হাতে না-ও পেতে পারেন।
এতে সদস্যতা:
মন্তব্যগুলি পোস্ট করুন (Atom)
0 মন্তব্য(গুলি):
একটি মন্তব্য পোস্ট করুন